নূরুল ইসলাম বরিন্দী ।।
সম্মানিত পাঠক/পাঠিকাবৃন্দ, তিনটি কারণে আমি এই কলামে বক্ষ্যমান লখোটি প্রকাশনার গরজ অনুভব করছি। প্রথমত দশেরে বিভিন্ন মসজিদে জুমাবার কিংবা ওয়াক্তের নামাজে বিপুলসংখ্যক মুসল্লির উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। ব্যাপারটা একদিকে যেমন ধর্মীয় দৃষ্টিকোণের বিচারে আশাব্যঞ্জক অপরদিকে তেমনি অধিকাংশ মুসল্লির নামাজ পড়ার ধরনটা অত্যন্ত পীড়াদায়ক এবং অপছন্দনীয়ও বটে! দৃশ্যত কুরআন-হাদিস নির্দেশিত নামাজ পড়েন না বেশিরভাগ মানুষ। এমন দৃশ্য শুধু যে ঢাকা শহরের তা কিন্তু নয়, এ চিত্র সারা দেশের। এটা আমার সরেজমিন পর্যবেক্ষণের ফলাফল।
দ্বিতীয়ত মুসলমান হিসেবে সবার জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজই ফরজ। শুধু সপ্তাহের একটা দিন শুক্রবারে মসজিদে যাবেন আর সময়মতো ওয়াক্তের নামাজ পড়ার গরজ অনুভব করবেন না এটা মুমনি বা মুসলমান হওয়ার লক্ষণ নয়। ভুলে গেলে চলবে না ‘লোক দেখানো’ নামাজীদের জন্য ‘দুর্ভোগের’ ঘোষণা রয়েছে আল্লাহ তায়ালার তরফ থেকে পবিত্র কুরআনের সুরা মাউনে। তৃতীয়ত একজন পাঞ্জেগানা নামাজী, যিনি জীবনভর নিয়মিত নামাজ পড়ে আসছেন। শর্তানুযায়ী কিংবা মনের টানে জামাতেও অংশ নিচ্ছেন, কিন্তু পরিতাপের বিষয় সেই তাকেও দেখা যায় ফরজ নামাজশেষে বাকি নামাজগুলো অত্যন্ত দ্রুততার সাথে পড়ে (খুশু-খুজু পরিহার করে), তাসবিহ-তাহলিল কিংবা মোনাজাতে মশগুল না হয়ে হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে যান। তিনি সুন্নাহ্ ভালোভাবে আদায় না করে নফল বা মুস্তাহাবকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন । এমনটি করা তার ইচ্ছাকৃত নাকি অজ্ঞতাবশত তা তিনিই জানেন। এটা গ্রহনীয় বা শোভনীয় নয়।
প্রিয় পাঠক/পাঠকিা, আমি চেষ্টা করেছি পবিত্র কুরআন ও হাদিস বোখারী/মুসলিম/আবু দাউদ/নাছায়ী শরীফ- সেইসাথে দালিলিকভাবে নির্ভরযোগ্য সূত্র যেমন- ইমাম নববীর রিয়াদুস সালেহীন, হাফেজ ইবনে কাছিরের ইতিহাস গ্রন্থ আল বিদায়া ওয়াননিহায়া, সীরাত ইবনে হিশামসহ আরো কতিপয় নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ থেকে আহরণ করা বিষয়গুলোকে সুবিন্যস্তরূপে সাজাবার। বিশেষ করে সাধারণ মানুষদের জানার জন্য নামাজসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর প্রতি জোর দিয়েছি আর নামাজ যাতে বিশুদ্ধভাবে পড়া এবং কুরআন শুদ্ধরূপে পড়ে তার অর্থ জানার এবং বোঝার ব্যাপারে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয় তদ্বিষয়ে তাগিদ দিয়েছি। ধর্মবিষয়ক বিদ্যা-বুদ্ধি সীমিত। তাই ভুল-ভ্রান্তি হওয়াটাই স্বাভাবিক। মানুষ তো আর ফেরেস্তা নয়। প্রাজ্ঞ পাঠকগণের কাছে আমার বিনীত অনুরোধ রইলো লখোটিতে কুরআন-হাদিসের কোনো খেলাপ চোখে পড়লে এবং অন্যান্য বিষয়ে ভুল-ভ্রান্তি ধরিয়ে দিলে কৃতজ্ঞতা থাকবো।
লেখাটি আগাগোড়া দেখে এবং এর বিভিন্ন অংশের সংশোধন, পরিবর্তন-পরিবর্ধন করে দেয়ার জন্য জনাব মুফতি মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, জামি‘আ ইকরা বাংলাদেশ-এর কাছে আমি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমাদের সবাইকে বিশুদ্ধভাবে নামাজ ‘কায়েম’ করার তওফিক দান করুন। (লেখাটি ধারাবাহিকভাবে চলবে……)
নূরুল ইসলাম বরিন্দী, Email: nibarindi@gmail.com