আনোয়ার আলদীন
‘ত্যাগ চাই, মার্সিয়া ক্রন্দন চাহি না’র দিন এলো আজ। আজ মহররমের ১০ তারিখ, পবিত্র আশুরা। পৃথিবী সৃষ্টির সূচনা থেকে এযাবত্ অসংখ্য বিস্ময়কর ঘটনার দিন। শুধু মুসলিম নয়, সব মানুষের কাছে দিনটি অবিস্মরণীয়। ইসলামের ইতিহাসে এক অসামান্য তাত্পর্যে উজ্জ্বল এই আশুরা। ইবাদত-বন্দেগির জন্যও দিবসটি অতুলনীয়। সবকিছু ছাপিয়ে কারবালার মর্মন্তুদ সকরুণ শোকগাথা এই দিবসকে গভীর কালো রেখায় উত্কীর্ণ করে রেখেছে। ৬১ হিজরি সালের এই দিনে হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসাইন (রা) ও তার পরিবারের সদস্যরা ইয়াজিদের সৈন্যদের হাতে কারবালার ময়দানে শহিদ হন। পবিত্র আশুরা তাই মুসলিম উম্মাহর জন্য এক তাত্পর্যময় ও শোকাবহ দিন। দিনটি মুসলমানদের কাছে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠারও দিন। দিনটি আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে খুবই প্রিয়। তাই তিনি এ দিনে রোজা পালনের সওয়াব প্রদান করে থাকেন বহুগুণে। মুসলমানদের কাছে বিগত বছরের গোনাহর কাফফারা হিসেবে মহররমের দুটি রোজা রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হজরত আবু হুরায়রাহ (রা) থেকে বর্ণিত :রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, রমজানের পর সর্বোত্তম রোজা হলো আল্লাহর প্রিয় মহররম মাসের রোজা এবং ফরজ নামাজের পর সর্বোত্তম নামাজ হলো রাতের (তাহাজ্জুদ) নামাজ (সহিহ মুসলিম)।
মহান আল্লাহ তাআলা এ দিনেই আরশ, কুরছি, লওহ, কলম, আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেন এবং এ দিনেই আদম (আ)কে সৃষ্টি করে তাকে বেহেশতে স্থান দেন। পরবর্তীতে শয়তানের প্ররোচনায় ভুলের কারণে এ দিনেই তাকে দুনিয়াতে পাঠিয়ে আল্লাহ প্রতিনিধি নির্বাচিত করেন। পবিত্র আশুরার দিনে মহাপ্লাবনের সময় হজরত নূহ (আ)-এর নৌকা তার অনুসারীদের নিয়ে জুদি পাহাড়ের পাদদেশে এসে থেমেছিল। পবিত্র আশুরার দিনে হজরত ইব্রাহিম (আ) নমরুদের অগ্নিকুণ্ড থেকে উদ্ধার লাভ করেন এবং নিজের প্রাণাধিক প্রিয় পুত্র হজরত ইসমাইল (আ)কে আল্লাহর নামে জবেহ করতে উদ্যত হলে আল্লাহর বন্ধু হিসেবে আখ্যায়িত হন। এ দিনেই হজরত আইউব (আ) কঠিন রোগ থেকে মুক্তি পান। হজরত ঈসা (আ) জন্মগ্রহণ করেন এবং কাফেরদের ষড়যন্ত্রের শিকার হলে আল্লাহ তাকে চতুর্থ আসমানে উঠিয়ে নেন। এ দিনেই হজরত ইউনুস (আ) মাছের পেট থেকে মুক্তি পান এবং স্বীয় কওমের লোকজনসহ হজরত মুসা (আ) নীল নদ অতিক্রম করে ফেরাউনের জুলুম থেকে মুক্তি লাভ করেন। পবিত্র আশুরা সমগ্র জগত্ সৃষ্টির দিন হিসেবে যেমন স্বীকৃত, তেমনি এদিন কেয়ামত অনুষ্ঠিত হয়ে জগত্ ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে।
সূত্র:- দৈনিক ইত্তেফাক।