নাবালিকা গৃহকর্মীকে সাত বছর ধরে আটক রাখার অভিযোগ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে

স্টাফ রিপোর্টার:

অভাবের তাড়নায় রংপুরের মিঠাপুকুর থেকে ঢাকার মেরাদিয়ায় গিয়ে ভাড়ায় রিকসা চালাতেন মিজানুর রহমান। দুই শিশু সন্তানকে রেখে পরিবারের মুখে হাসি ফোঁটাতে মিজানুরের স্ত্রী সম্পা বেগম (৩৫) গিয়েছিলেন গৃহকর্মী হিসেবে সৌদি আরবে।

মিনুর বয়স যখন ৯ বছর, তখন কুড়িগ্রাম জেলার সাবেক পুলিশ সুপার, বর্তমানে নেত্রকোনা ইন সার্ভিস পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারের কমান্ড্যান্ট পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত জান্নাত আফরোজের পিতা হক মিয়া মিজানুর রহমানকে বলেন, আমার মেয়ের বাসায় তোর মেয়ে মিনুকে গৃহকর্মী হিসেবে রাখ। সে আমার নাতি, নাতনিকে দেখাশোনা করবে। আমরা তোর মেয়ের সমস্ত ভরণপোষণ সহ প্রতিমাসে ৫০০০ টাকা এবং বড় হলে বিয়ের সমস্ত দায়িত্ব নিবো। পুলিশ সুপারের বাবার কথায় মেয়ের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে মেয়েকে ২০১৮ সালে গৃহকর্মী হিসেবে জান্নাত আফরোজের বাসায় রাখেন মিজানুর রহমান।
কিন্তু শিশুটিকে জান্নাত আফরোজের বাসায় দেওয়ার পর থেকে সাত বছরে একদিনেও মিনুর মুখ দেখতে পারেননি বাবা মিজানুর রহমান।

মিজানুর রহমান জানান, প্রথম দু-বছর পুলিশ সুপার জান্নাত আফরোজ, প্রতিমাসে পাঁচ হাজার টাকা করে দিয়েছিলেন। মেয়েকে দেখতে চাইলে শুধু ফোনে কথা বলাতেন কিন্তু বিগত পাঁচ বছর থেকে মেয়ের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। ইদানীং মুঠোফোনে মেয়ের সঙ্গে কথা বলার সূযোগ পেলেও এটা আমার মেয়ের কণ্ঠ না অন্য কেউ বুঝতে পারছিনা।

এদিকে সোমবার (১৮-আগষ্ট) মেয়েকে ফেরত চেয়ে জান্নাত আফরোজের বিরুদ্ধে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বরাবর অভিযোগ দাখিল করেছেন মিজানুর রহমান।

অভিযোগে তিনি উল্লেখ্য করেছেন, মেয়েকে দেখার জন্য মিলুর মা সম্পা বেগম সয্যাসায়ী। মেয়েকে এক নজর দেখার জন্য সাত বছর থেকে তারা পুলিশ সুপার জান্নাত আফরোজের বাসা সহ কর্মস্থলে বারবার রংপুর থেকে ঢাকায় যাচ্ছেন। কিন্তু মেয়ের সঙ্গে কোনো ভাবেই তারা দেখা করতে পারেননি। এমনকি মেয়েকে ফেরত চাওয়ায় পুলিশ সুপার জান্নাত আফরোজ তাদের বিভিন্ন ভাবে হুমকি ধামকি দিচ্ছেন।

তিনি আরো অভিযোগ করেন, মিনুর বর্তমান বয়স (১৬)। বিভিন্ন ভাবে তিনি জানতে পেরেছেন মিনুকে জিম্মি রেখে তার উপর শারীরিক, মানসিক অত্যাচার করা হচ্ছে। মিনুর মা সম্পা বেগম বলেন, মেয়েটার বিয়ে দেওয়ার বয়স হয়েছে। কোথায় কি অবস্থায় আছে,উপর আল্লাহ জানে। ইউপি সদস্য রায়হান মেম্বার বলেন, আমি নিজে কথা বলেছি। কিন্তু এসপি, আমার সঙ্গেও দূর্ব্যবহার করেছে। এঁরা গরীব মানুষ। বাচ্চাটার শোকে এই গরিব মানুষ গুলো ভেঙে পড়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে বর্তমানে নেত্রকোনা ইন সার্ভিস পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারের কমান্ড্যান্ট পুলিশ সুপারের দায়িত্বরত জান্নাত- আফরোজের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ওর বাবা একজন মাদকাসক্ত লোক। মেয়েটা নিজেই যেতে চায়না। তবে বাবা মিজানুর রহমান মাদকসক্ত হলেও মিনুর মাকেও কেনো মিনুর সঙ্গে দেখা করার সূযোগ দেননি প্রশ্ন করায় তিনি বলেন, সাংবাদিকের মতো প্রশ্ন করবেননা। আগে পরিস্থিতি বুঝুন।

এ বিষয়ে নেত্রকোনা জেলা পুলিশ সুপার মোঃ ফয়েজ আহম্মেদ (পিপিএম-সেবা) জানান, উনাকে এ বিষয়ে আমার প্রশ্ন করার সূযোগ নেই। উনি একটা ভিন্ন ডিপার্টমেন্টে কর্মরত। আপনারা বিষয়টি নিজেরাই একটু কথা বলে দেখেন।

এম২৪নিউজ/আখতার

Leave a Reply