স্টাফ রিপোর্টার:
মিঠাপুকুরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদ ধরে রাখতে পাতানো নির্বাচনের কৌশল অবলম্বনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গর্ভনিং বডি’র নির্বাচনে নিজের লোকজন ব্যতিত মনোনয়নপত্র না দেওয়া, গোপন প্রচারনা চালানো ও অভিভাবকদের ভোটার হিসেবে না রাখাসহ নানাবিধ অনিয়মের অভিযোগ করেছেন অভিভাবকরা। তারা রংপুর জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
দু’দফায় অভিযোগ দায়ের হলেও কোন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করেনি প্রশাসন। উল্টো পাতানো নির্বাচন সম্পন্ন করতে সহযোগীতার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জাহিদুল ইসলামে বিরুদ্ধে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিঠাপুকুরের মিলনপুর ইউনিয়নের গোপালপুর স্কুল এন্ড কলেজের নিয়মিত গর্ভনিং বডি’র মেয়াদ শেষ হয়েছে কয়েক মাস আগে। এডহক কমিটি দিয়ে চলছে প্রতিষ্ঠানটি। নিয়মিত কমিটি গঠনের লক্ষে চলছে প্রস্তুতি। কিন্তু, নিজের পছন্দমত লোকজনকে দিয়ে গোপনে কমিটি তৈরীর পায়তারা চালাচ্ছেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম। বিষয়টি বুঝতে পেরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন স্থানীয়রা।
তাদের অভিযোগ, কোন প্রকার প্রচার-প্রচারণা না করে গোপনে মনোনয়নপত্র বিক্রি করেছেন অধ্যক্ষ। শুধুমাত্র তার পছন্দমত ব্যক্তিরা ছাড়া কেউ মনোনয়নপত্র ফরম তুলতে পারেনি। এরফলে, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় তার লোকজনেরা নির্বাচিত হওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জাহিদুল ইসলাম নির্বাচনের প্রিজাইডিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করছেন। তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গোপালপুর স্কুল এন্ড কলেজের গর্ভনিং বডি’র নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র বিতরণ ও জমাদানের শেষ দিন ছিল ১৯-২১ মার্চ, মনোনয়নপত্র বাছাই ও বৈধ প্রার্থীর নাম ঘোষণা ছিল ২২ মার্চ, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার ও চুড়ান্ত প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ ২৩ মার্চ ও ৬ এপ্রিল নির্বাচনের দিন ধার্য ছিল। প্রচারণা না চালানোয় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শুধুমাত্র ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের লোকজনেরা ছাড়া কেউ মনোনয়নপত্র তুলতে পারেনি।
কমিটির ৮ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির মধ্যে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন ৯ জন। এরমধ্যে, ১ জনকে ম্যানেজ করে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করান অধ্যক্ষ। একারণে, চুড়ান্ত প্রার্থীরা বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হওয়ার ঘোষনার অপেক্ষায়। এ ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই প্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষ, অফিস সহকারী ও চতুর্থ শ্রেণীর একাধীক পদ শুন্য রয়েছে। এই কমিটি গঠন হলে ওই শুন্যপদগুলোতে নিয়োগ প্রদান করার হবে। অধ্যক্ষ ইচ্ছেমত নিয়োগ প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করতে ও নিজের পদকে ধরে রাখতে এই পাতানো নির্বাচন করছে বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন।
ওই প্রতিষ্ঠানের অভিভাবক মোস্তাফিজার রহমান পাতানো নির্বাচন বন্ধে রংপুর জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে দ্বিতীয় দফায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগের সুত্র ধরে অনুসন্ধান চালিয়ে জানা গেছে, বৈধ প্রার্থীদের মধ্যে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শহিদুল ইসলামে চাচাতো ভাই অভিভাবক সদস্য, তার আত্মীয় শিক্ষক প্রতিনিধি, আরেক শিক্ষক প্রতিনিধির ভাইকে অভিভাবক সদস্য, তার নিকট আত্মীয়কে শিক্ষক প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত করেছেন অধ্যক্ষ।
অভিভাবক মোস্তাফিজার রহমান বলেন, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তার নিজের পদকে পাকাপোক্ত করতে পাতানো নির্বাচনের চেষ্টা চালাচ্ছেন। একাধীকবার জেলা প্রশাসক ও ইউএনও’কে অভিযোগ দিলেও কোন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করেননি।
তিনি আরও বলেন, আমি ব্যক্তিগত ভাবে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জাহিদুল ইসলামের সাথে কথা বলেছি। অভিযোগ দেওয়ায় তিনি উত্তেজিত হয়ে আমার সাথে অসৌজন্যমুলক আচরণ করছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন অভিভাবক বলেন, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তার পছন্দমত ব্যক্তিদের দিয়ে কমিটি গঠনের চেষ্টা চালাচ্ছেন। তাকে সহযোগীতা করছেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জাহিদুল ইসলাম। তিনি মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে ওই পাতানো নির্বাচনকে জায়েজ করার চেষ্টা করছেন।
এলাকাবাসির অভিযোগ, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের তালিকা স্কুল এন্ড কলেজের নোটিশ বোর্ডে ঝুলিয়ে দিয়ে তাদেরকে নির্বাচিত ঘোষণা করেছেন অধ্যক্ষ। পুনরায় তফসিল ঘোষণা করে ব্যাপক প্রচার-প্রচারনার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির গর্ভনিং বডির নির্বাচন করার দাবি জানান স্থানীয়রা।
গোপালপুর স্কুল এন্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম বলেন, নিয়মতান্ত্রিক ভাবে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। কোন আইনগত ফাঁক-ফোকর নেই।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জাহিদুল ইসলাম বলেন, কমিটি গঠনের নিয়মানুযায়ী সব প্রক্রিয়া চলছে। সঠিক সময়ে কমিটি গঠন হবে। উৎকোচের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেছেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাতেমাতুজ জোহরা বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তের জন্য সহকারী কমিশনার (ভূমি)কে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। উৎকোচ গ্রহনের অভিযোগ প্রমানিত হলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এম২৪নিউজ/আখতার