মিঠাপুকুরে দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া তিন জমজ সন্তানকে নিয়ে অসহায় মা-বাবা!

শেয়ার করুন

সন্তানদের দুধের যোগান দিতে অন্যের কাছে হাত পাত-তে হচ্ছে প্রতিনিয়ত |

মোঃ শামীম আখতার |

মিঠাপুকুরে দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া তিন জমজ সন্তানকে নিয়ে মহাবিপাকে পড়েছে এক পরিবার। খাদ্যের অভাবে অপুষ্টিতে ভুগছে ৩ জমজ শিশু। সন্তানদের দুধের যোগান দিতে অন্যের কাছে হাত পাত-তে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। বাচ্চাগুলোকে নিয়ে খুবই মানতেবর জীবন-যাপন করছে রাণীপুকুর ইউনিয়নের রাণীপুকুর পূর্বপাড়া গ্রামের অসহায় পরিবারটি। আর্থিক সাহায্য চেয়ে উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা বরাবর একটি আবেদন করেছেন গৃহকর্তা রবিউল ইসলাম।

এলাকাবাসী ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, উপজেলার রাণীপুকুর ইউনিয়নের রাণীপুকুর পূর্বপাড়া গ্রামের আমজাদ হোসেনের বড় মেয়ে আজমিরা বেগমের একই ইউনিয়নের হল্লাইপাড়া গ্রামের আব্দুল জোব্বার মিয়ার ছেলে রবিউল ইসলামের সাথে চার বছর আগে বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে বউ নিয়ে শশুরবাড়ীতে থাকেন রবিউল। তাদের দাম্পত্য জীবনে গত ২৪ মার্চ রংপুর প্রাইম হাসপাতালে গৃহবধূ আজমিরা বেগমের কোল জুড়ে জমজ তিন (দুই ছেলে ও এক মেয়ে) সন্তানের জন্ম হয়। নাম রাখা হয় রুকাইয়া জান্নাত, আসাদুল্লাহ্ আল আরাফাত ও আল আমির হামজা। হাসপাতালটি প্রাইভেট হওয়ায় মা ও সন্তানদের চিকিৎসা খরচ যোগাতে না পেরে সন্তান প্রসবের দুই ঘন্টা পর তাদের রংপুর সরকারী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে ৭ দিন ভর্তি থাকার পর জমজ তিন সন্তান ও স্ত্রীকে বাড়িতে নিয়ে আসেন রবিউল ইসলাম।

তিনি বলেন, মূলধন বলতে একটি দোকান ছিল। মা ও সন্তানের চিকিৎসার পিছনে সব শেষ। টাকার অভাবে সেটিও খুলতে পারছিনা। প্রতিবেশিদের সহযোগীতা ও গ্রামের ফি-সাবিলিল্লাহ তহবীল থেকে পাওয়া কিছু টাকা দিয়ে প্রায় ৬ মাস ধরে সন্তানদের নিয়ে কোন রকমে জীবন-যাপন করছি। তিনি আরও বলেন, একসাথে তিন সন্তানের বাবা হতে পেরে আমি খুবই খুশি। কিন্তু অভাবের তাড়নায় মানুষের কাছে হাত পেতে স্ত্রী, সন্তানদের খাওয়াতে হচ্ছে। এসময় নিজের অভাব-অনটনের কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেললেন জমজ তিন সন্তানের জনক রবিউল ইসলাম।

মা আজমিরা বেগম বলেন, সন্তান জন্ম দেয়ার পর বেশ কিছু দিন আমরা অসুস্থ্য ছিলাম। দুই হাসপাতালে আমাদের চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা ব্যয় হয়। দোকানের মূলধন শেষ হওয়ার পর বেশ কিছু টাকা ঋণ হয়। সন্তানদের দুধের যোগান দিতে অন্যের কাছে হাত পাত-তে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এলাকাবাসীও অনেক সাহায্য করেছেন। বর্তমানে ঋণের টাকা পরিশোধ ও সন্তানদের খাওয়ার টাকা জোগাড় করা আমাদের পক্ষে অসম্ভব ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই সরকার সহ বিত্তবানদের কাছে সহায়তার হাত বাড়িয়েছি।

প্রতিবেশী নুরুজ্জামান তারা মিয়া বলেন, পরিবারটি খুবই দরিদ্র। রবিউল ইসলাম শিক্ষিত ছেলে। চাকরি না পাওয়ায় ছোট একটি গালামালের দোকান দিয়ে কোন রকমে সংসার চলছিল। তাদের অভাবের সংসারে প্রায় ৬ মাস আগে একসাথে তিন সন্তানের জন্ম হয়। মা ও সন্তানের শারিরিক অবস্থা খারাপ থাকায় চিকিৎসার খরচ যোগান দিতে গিয়ে দোকানের মূলধন শেষ হয়ে যায়। বর্তমানে সন্তানদের ভরন-পোষন নিয়ে মহাবিপাকে পড়েছে পরিবারটি। সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

রাণীপুকুর ইউপি চেয়ারম্যান আবু ফরহাদ পুটু বলেন, বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদে তেমন কোন বরাদ্দ নেই। উপজেলা সমাজসেবা অফিসে যোগাযোগ করার জন্য পরামর্শ দেন তিনি।

উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা রকিবুল হাসান বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। এ বিষয়ে একটি আবেদন পেয়েছি। দ্রুত পরিবারটির খোঁজ-খবর নিয়ে তাদেরকে আর্থিক সহায়তা করা হবে বলে জানান তিনি।

এম২৪নিউজ/আখতার

Leave a Reply