স্টাফ রিপোর্টার:
রংপুরের মিঠাপুকুরে এক কৃষকের ১৮ শতক জমিতে লাগানো বোরো ধানের চারা নষ্ট করে মাটির সাথে মিশে দিয়েছে দূর্বৃত্তরা। এতে ক্ষতিগ্রস্থ্য কৃষক দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। গত রবিবার কষ্টার্জিত টাকা ব্যয় করে জমিতে চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে ধান উৎপাদনের লক্ষ্যে বোরো চারা রোপন করেছিলেন নারী কৃষক ছামসোন নাহার (৫০)।
পরদিন সোমবার সকালে জমিতে গিয়ে দেখেন দূর্বৃত্তরা তার জমির বোরো চারা মই দিয়ে মাটির সাথে মিশে নষ্ট করে দিয়েছেন। এ ঘটনায় ওই এলাকার অন্যান্য কৃষকদের মাঝে আতংক বিরাজ করছে। স্থানীয়রা বলছেন ফসলের কোন দোষ নেই। যে বা যারা ফসল নষ্ট করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ভুক্তভোগী নারী কৃষক ছামসোন নাহার উপজেলার রাণীপুকুর ইউনিয়নের মাদারপুর গ্রামের স্বাধীন মিয়ার স্ত্রী। তার দুটি সন্তান রয়েছে একটি ছেলে ও একটি মেয়ে।
সরেজমিনে জানা গেছে, উপজেলার রাণীপুকুর ইউনিয়নের মাদারপুর খিয়ারচড়া সংলগ্ন মাঠজুড়ে বোরো চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক ও কৃষি শ্রমিকেরা। কোন কোন জমিতে আলু, সরিষাসহ হরেক রকম সবজি চাষ করা হয়েছে। সেই মাঠের একটি জমি মায়ের অংশীদার সূত্রে নানী হেপাতন নেছা জীবিত থাকা অবস্থায় প্রায় ১৭ বছর আগে ১৮ শতক জমি নাতনী ছামসোন নাহারকে কবলা করে দেন। সেই থেকে নারী কৃষক ছামসোন নাহার স্বামী-সন্তান নিয়ে ওই জমি চাষাবাদ করে আসছিলেন।
সম্প্রতি মেয়ের বিবাহ দিতে টাকার প্রয়োজন হওয়ায় জমিটি বিক্রি করার সিন্ধান্ত নিলে বাঁধা দেন ছামসোন নাহারের একমাত্র মামা মোস্তাফিজার রহমান। তিনি জমিটি নিজে বাজার মূল্যের চেয়ে কম দামে দলিল করে নিতে নানান কৌশল অবলম্বন করে সেই জমিতে ভাগ বসান। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবে শালীস বৈঠকও হয়। সেখানেও ছামসোন নাহার জমিটির বৈধ মালিক এবং ১৭ বছর ধরে চাষাবাদ করে আসছেন প্রমাণিত হয়। কিন্তু বাস্তবতা মানতে নারাজ মোস্তাফিজার জমি কেনা তো দূরের কথা উল্টো দূর্বৃত্তদের সাথে নিয়ে রাতের আঁধারে জমির বোরো চারা নষ্ট করে দেন। যাতে নারী কৃষক ছামসোন নাহার কম মূল্যে মোস্তাফিজারকে জমি দিতে বাধ্য হয়। এমন অন্যায় কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নিতে ভুক্তভোগীকে পরামর্শ দিয়েছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় কৃষক মাজেদ মিয়া বলেন, আমরা ১০ -১৫ বছর ধরে দেখছি জমিটা ছামসোন নাহার আবাদ করেন। হঠাৎ মামা-ভাগ্নির কি হলো জানিনা। মামা এসে জমির চারা মই দিয়ে নষ্ট করলো। এটা অন্যায়, ফসলের তো কোন অপরাধ নেই। করিমন নেছা নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, ছামসোন তার নানীর মৃত্যুর আগে অনেক সেবাযত্ন করেছেন। তিনি অসুস্থ ছিলেন রক্ত, পুজ, পায়খানা সব পরিস্কার করেছেন। এখন যা হচ্ছে এটা ঠিক না।
ভুক্তভোগী নারী কৃষক ছামসোন নাহার বলেন, আমি গরীব মানুষ। আমার ওই একটায় কৃষি জমি। অনেক কষ্ট করে ছেলে মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়েছি। এখন ছেলে ও মেয়ের পিছনে কিছু টাকার খুব প্রয়োজন। জমিটি বিক্রি করতে গেলে আমার মামা বাঁধা দিচ্ছেন এবং খুব কম দামে জমি তাকে লিখে দিতে বলছেন। জমির চারা নষ্ট করেছেন। আমাদের মারপিটসহ হত্যার হুমকি দিচ্ছেন। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় আছি।
অভিযুক্ত মোস্তাফিজার রহমানের বাড়িতে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার স্ত্রী মনোয়ারা বেগম বলেন, এখন বাড়িতে কেউ নেই। মামা ভাগ্নির বিষয় ওরা জমি বাইরে বিক্রি করবে কেন? আমিই কয়েকজন সাথে নিয়ে ধানের চারা নষ্ট করেছি। ফসলের কি অপরাধ? প্রশ্ন করলে উত্তরে তিনি বলেন, অনেক কারণ আছে আপনি বুঝবেন না।
এ বিষয়ে মিঠাপুকুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, জমির ফসল নষ্ট করার বিষয়টি জানা নেই। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগতভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এম২৪নিউজ/আখতার