তিস্তার ভাঙন ঠেকাতে জনগণের চাঁদায় বাঁধ নির্মাণ

স্টাফ রিপোর্টার, গঙ্গাচড়া (রংপুর):

অবশেষে তিস্তার ভাঙন ঠেকাতে জনগণের চাঁদার টাকায় নির্মাণ করা হচ্ছে বেড়িবাঁধ। পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি চালাচালি এবং যোগাযোগ করার পরও কাজ না হওয়ায় জনগণ স্বেচ্ছায় তৈরি করছে বাঁধ। স্থানীয় লোকজন দীর্ঘদিন থেকে এটি দাবি করে আসছিল। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।

স্থানীয়রা জানান, শেখ হাসিনা তিস্তা সেতু থেকে উত্তরে সাত কিলোমিটার একটি বেড়ি বাঁধ না দেওয়ায় গত বছর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

জানা যায়,বর্তমানে তিস্তার মূল প্রবাহ শেখ হাসিনা গঙ্গাচড়া সেতুর নিচ দিয়ে প্রবাহিত না হয়ে আরও দুটি নতুন চ্যানেলে প্রবাহিত হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, গত বছর শংকরদহ এলাকায় একটি বাঁধ ভেঙে যাওয়ার কারণে ভিন্ন চ্যানেল বের হয়ে চর ইচলী হয়ে এসকেএস বাজার দিয়ে একটি, গঙ্গাচড়ার শেষ প্রান্ত সেরাজুল মার্কেটের কাছে সেতুর নিচ দিয়ে অন্য চ্যানেলটি প্রবাহিত হচ্ছে। নতুন এই গতিপথ দুটো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠে। ফলে লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ড সম্পূর্ণরূপে বিলীন হয়ে গেছে। ২, ৩, ৪ ও ৫ নং ওয়ার্ডের বেশির ভাগ এলাকার বাড়িঘর বিলীন হয়ে গেছে। গত বছরের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা হলো লক্ষ্মীটারী ইউনিয়ন। স্থানীয় লোকজন বলছেন শুকনা মৌসুমে বাঁধের কাজ করার উপযুক্ত সময়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ইউনিয়নের পশ্চিম ইচলি এলাকায় নির্মাণ করা হচ্ছে একটি বালুর বাঁধ। জনগণ চাঁদা দিয়ে নির্মাণ করছে এই বাঁধটি। বাঁধটির প্রতিটি স্থান ভেদে ৩০ থেকে ৭০ ফুট পর্যন্ত করা হয়েছে। উচ্চতাও ১২ থেকে ১৪ ফুট। দীর্ঘ হবে ৪ কিলোমিটার।

পশ্চিম ইচলি এলাকার কৃষক মোক্তারুল জানান, তারা চাঁদা ধরেছে ২০ হাজার টাকা। তিনি দিয়েছেন এ পর্যন্ত ৬ হাজার টাকা। এলাকার আউয়াল দিয়েছেন ১৫ হাজার টাকা। স্থানীয় লোকজন বলছেন, বাঁধ দিলেও বাঁধের সামনে ব্লক পিচিং না দিলে বাঁধ ঠেকানো সম্ভব হবে না। তাই তারা বাঁধে সরকারিভাবে ব্লক পিচিং করার দাবি করছেন।

লক্ষ্মীটারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন, সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ইউনিয়ন হলো এই ইউনিয়ন। ইতিমধ্যে এক নং ওয়ার্ড সম্পূর্ণরূপে বিলীন হয়ে গেছে। ২, ৩, ৪ ও ৫ নং ওয়ার্ডের বেশির ভাগ এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, গত কয়েক বছর প্রধানমন্ত্রী,পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করেও কাজ হয়নি। তাই এ বছর বর্ষা আসার আগে ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষার্থে জনগণ চাঁদা তুলে বাঁধ নির্মাণ করছে। এ পর্যন্ত দুই কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। আরও ২ কিলোমিটার এলাকা বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। এতে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। এই মুহূর্তে বাঁধের কাজ করা দরকার। আর এই মুহূর্তে কাজ না করলে আগামী বছরে ব্যাপক এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সেইসাথে শেখ হাসিনা তিস্তা সেতু সংযোগ সড়ক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ,মন্দির বিলীন হয়ে যাবে।

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবিব বলেন, যেহেতু সেখানে এলজিইডি নির্মিত ৮৫০মিটার দৈর্ঘ্যের শেখ হাসিনা তিস্তা সেতু রয়েছে। সেহেতু সেতু সংযুক্ত নদী শাসন এলজিইডি করবে। এ সংক্রান্ত চিঠি তারা পেয়েছেন।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের জেলা রংপুর নির্বাহী প্রকৌশলী রেজাউল ইসলাম বলেন, নদী শাসন সংক্রান্ত চিঠি তিনি পাননি। যেহেতু রাস্তাটি এলজিইডির। সেহেতু ব্রিজ ও সংযোগ সড়ক রক্ষার দায়িত্ব আমাদের। নদী শাসনের কাজ দিলেও আমরা করতে পারবো না। কারণ এটাতো আমাদের কাজ না। নদী শাসন পানি উন্নয়ন বোর্ড করবে।

এম২৪নিউজ/আখতার