নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে পণ্য বিক্রি হচ্ছে : রংপুরে জিএম কাদের

শেয়ার করুন

রংপুর অফিস:

রংপুরে দু’দিনের রাজনৈতিক সফরে এসে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের বলেছেন, সিন্ডিকেট সরকারকে পাত্তা দিচ্ছে না সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে পণ্য বিক্রি হচ্ছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোন পদক্ষেপ জনগণের চোখে পড়ছে না। মানুষ দ্রব্যমূল্যের চাপে অত্যন্ত কষ্টে আছে।

রংপুর ও লালমনিরহাটে দু’দিনের সফরে এসে শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রংপুর নগরীর দর্শনাস্থ পল্লী নিবাস বাসভবনে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের করব জিয়ারত শেষে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় কালে তিনি এসব কথা বলেন।

জিএম কাদের বলেন,কোন পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়ার আগে বাজারে চাহিদা ও যোগান কত তা পরিমান করতে হয়, নানা ধরনের ডাটা নিতে হয়, গবেষণা করতে হয়। পেঁয়াজ, ডিম ও আলু’র দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে সরকার এসব বিষয় বিবেচনা করেনি বলে আমার মনে হয়েছে। ফলে বাজারে এসব পণ্যের দাম কমেনি। সরকার যতই দাম নির্ধারণ করুক, যদি চাহিদার তুলনায় যোগান কম-বেশি হয়, তবে সে দাম স্থির রাখা সম্ভব হবে না। এছাড়া সরকার জোর করে পণ্যের দাম বাড়ালে জনগণ ক্ষতিগ্রস্থ হবে, আবার কমালে উৎপাদনকারী-ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্থ হবে।

তিনি আরো বলেন, পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও সরকার ব্যর্থ হয়েছে। আমি বাণিজ্যমন্ত্রী থাকাকালীন দ্রব্যমূল্য মানুষের হাতের নাগালে ছিল। আমার সময়ে দাম বাড়লে বা কমলে জনগণ জানতো দাম বাড়া ও কমার কারণ কি। তখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতি মানুষের আস্থা ছিল।এখন নানা অজুহাত দিয়ে দ্রব্য মূল্যের দাম বাড়ানো হচ্ছে। দেউলিয়া হয়ে যাওয়া শ্রীলংঙ্কা, পাকিস্তানের মত দেশে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আমাদের দেশের তুলনায় বিশ্ব বাজারে সকল পণ্যের দাম কম রয়েছে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী জিএম কাদের বলেন, দাম যেটা বেঁধে দেয়া হয়েছে, আমি মনে করি এটা কখনই সফল হওয়া সম্ভব নয়। দাম বেঁধে দেয়ার একটা নিয়ম ছিল, কতটুকু দাম রিজেনবেল হতে পারে। হিসাব নিকাশ করে সেটা জানানো হয়। রিজেনবলের বাইরে কেউ নিলে একটা শাস্তি মূলক ব্যবস্থা নিতে হয়। সহনীয় যেটাকে বলা হবে তা যুক্তি সঙ্গত দাম। সেটার জন্য অনেক পরিশ্রম করতে হয়, যথেষ্ট ঘাটঘাটি করতে হয়, ডাটা নিতে হয়,ইভেন ডিমান্ড এন্ড সাপ্লাইয়ের ওপর তা নির্ধারণ হয়। যদি সেটা ঠিক না থাকে। তাহলে আমি যতই চাপাচাপি করি এটা স্বাভাবিক ভাবে ঠিক হবে না।

জিএম কাদের বলেন, সিন্ডিকেট সরকারকে কোন পাত্তা দিচ্ছে বলে আমি মনে করি। যেখানে সরকারের ইনন্টারফেয়ার করার কথা, সরকারের কিছু দায়িত্ব থাকে। সেসব জায়গায় তারা সঠিকভাবে কিছু করছে, এ ধরণের কোন প্রমাণ আমরা পাই না। সে কারণে দ্রব্যমূল্য সরকার যাই বেঁধে দিয়ে থাকুক, বাজারে এর চেয়ে মূল্য বেশি।কৃষকরা অনেক সময় কম দামে দিচ্ছে শহরে তা অনেক বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এবং সেটা করা হচ্ছে অযৌক্তিকভাবে। তা নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোনো রকম কোনো বন্দোবস্ত বা পদক্ষেপ জনগণের চোখে পড়ছে না। দ্রব্যমূল্যের চাপে মানুষ অত্যন্ত কাহিল অবস্থায় আছে। এটা একটা দুর্বিসহ অবস্থা।

জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে সংসদের বিরোধী দলীয় উপনেতা বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত চিন্তা করছি ৩০০ আসনে নির্বাচন করবো। ভবিষ্যতে কি করবো, ভবিষ্যতের অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা হবে। যেহেতু এখনও রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনেক অস্থিতিশীল, অনিশ্চিত, অস্বচ্ছ।সবকিছু জেনে বিবেচনায় নিতে হবে। সবাই আমার মনে হয় এই অনিশ্চয়তার দিকে তাকিয়ে আছে।সরকার এক ধরণের নির্বাচন করতে চাচ্ছেন, সরকারের বিপক্ষ আরেক ধরণের নির্বাচন করতে চাইছেন। কোন পদ্ধতিতে আসলে নির্বাচন হবে, সেটাই আমরা জানি না। নির্বাচন সঠিক পথে সঠিক সময়ে হবে কিনা, এটা নিয়ে জনগণের মধ্যে অনেক কানা ঘুষা আছে সন্দেহ আছে, আশংকা আছে। সব মিলিয়ে আমরা এখনই কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না সঠিকভাবে। শেষ পর্যন্ত কে লড়বেন আর কে থাকবেন সেটাও অনিশ্চিত। রংপুর-৩ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

এসময় সঙ্গে ছিলেন পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ও জাতীয় সাংস্কৃতিক পার্টির সভাপতি শেরিফা কাদের এমপি,অতিরিক্ত মহাসচিব ব্যরিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এমপি,ঢাকা দক্ষিণের সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, ভাইস চেয়ারম্যান আদেলুর রহমান আদেল এমপি, রংপুর মহানগরের সাধারণ সম্পাদক ও পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান এস এম ইয়াসির, জেলার সদস্য সচিব ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী আব্দুর রাজ্জাক, কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাফিউল ইসলাম সাফি, সাংস্কৃতিক সম্পাদক আজমল হোসেন লেবু,কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য লোকমান হোসেন, জাতীয় ছাত্র সমাজের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল মামুন।

এম২৪নিউজ/আখতার

Leave a Reply