বন্ধুবন্ধুর ম্যুরালে পুষ্পমাল্য তছনছ : প্রতিবন্ধিসহ আটক ২

নিউজ ডেস্ক:

রংপুর জেলা স্কুলের সামনে অবস্থিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের  বিজয় দিবসের পুষ্পমাল্য তছনছ ও পদদলন করা হয়েছে। সোমবার রাতের যে কোন সময় এ ঘটনা ঘটে। এর প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকাল থেকে সড়ক অবরোধ করে জড়িতদের বিএনপি জামায়াত দায়ী করে তাদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগ। এদিকে পুষ্পমাল্যে ব্যবহৃত একাধিক বাঁশের ফালটিসহ দুইজনকে আটক করেছে পুলিশ।

সন্ধ্যায় এবিষয়ে মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আব্দুল আলীম মাহমুদ তার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানান, আটক আকাশ মিয়া (২০) একজন বুদ্ধি প্রতিবন্ধি মানুষ। সে কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরি বিদ্যালয়ে বৃত্তিমূলক শ্রেণির ছাত্র। সে কুড়িগ্রামে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করে। রাত ৮ টার দিকে রংপুরে আসে এবং রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে থাকে। এক পর্যায়ে সে ক্ষুধার্ত হয়ে পড়লে এবং তার নিকট কোন টাকা পয়সা না থাকায় মধ্যরাতের ম্যুরালের পুস্পস্তবকের ককসিট থেকে ফুলিগুলো খুলে আলাদা করে।

আকাশ মিয়া সকাল থেকে সুরভী উদ্যোনে বিপরীতে অবস্থিত ফুল বিতানসমূহের নিকট উক্ত ককসিটগুলো নিয়ে দাড়িয়ে থাকে। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ফুল বিতানের মালিক শাকিল হাসানের কাছে ওগুলো হস্তান্তর করে খাবার জন্য টাকা চায়। দোকানের মালিক তাকে ১০০ টাকা প্রদান করেন। ইতোমধ্যে ককসিটগুলো বাদশা ফুল বিতান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। কোতয়ালী থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করা হয়েছে। অপরদিকে আটককৃত ছকিনা বেগম (৬০) আকাশ মিয়ার ফেলে যাওযা বাশের লাঠি বঙ্গবন্ধ’ ম্যুরালের কাছ থেকে খুলে নিজ বাড়িতে নিয়ে যায়।

এদিকে দায়ীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বেলা সাড়ে ১২ টা নগরীর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করা হয়। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর শ্বশুর বাড়ী এলাকা রংপুরের পীরগঞ্জে ও জেলার আট উপজেলা সহ বিভিন্ন স্থানে দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবীতে সড়ক অবরোধ করেছে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা।

পুলিশ ও আওয়ামীলীগের দলীয় সূত্রজানাগেছে, রংপুর মহানগরীর বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে বিজয় দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও পেশাজীবী সংগঠনসহ সাধারণ মানুষ পুষ্পমাল্য দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সোমবার গভীর রাতে কে বা কারা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে হামলা চালিয়ে এসব পুষ্পমাল্যসহ ফুল ছিঁড়ে নীচে ফেলে দিয়ে তছনছ করে। ককসিট, বাঁশের ফালটি ফেলে দিয়ে পদদলিত তরে।

সকালে ঘটনা জানাজানি হলে ম্যুরাল এলাকা পরিদর্শন করেন সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আব্দুল আলীম মাহমুদ, ডিসি আসিব আহসান,আরপিএমপির উপ পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) শহীদুল্লাহ কায়সার, কোতয়ালী থানার ওসি আব্দুর রশিদসহ প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তারা। এর আগে সেখানে অবস্থান নেন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা কর্মীরা। তারা ম্যুরালের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ গড়ে তোলে। সেখানে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, মহানগর সভাপতি সাফিউর রহমান সাফি, জেলা সেক্রেটারি এ্যডভোকেট রেজাউল করিম রাজু, মহানগর সেক্রেটারি তুষার কান্তি মন্ডল প্রমুখ। এসময় তারা এ ঘটনার সাথে বিএনপি জামায়াতের লোকজন জড়িত দাবি করে তাদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি জানান।

এদিকে পুরো ঘটনাস্থল কর্ডন করে পিবিআই ও সিআইডি। এ বিষয়ে অভিযান চালিয়ে মুন্সিপাড়া থেকে ছকিনা নামের এক বৃদ্ধাকে ১২/১২টি পুষ্পমাল্যে ব্যবহৃত বাঁশের ফালটিসহ আটক করে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

সূত্র জানায়, পুলিশী জিজ্ঞাসাবাদে ওই বৃদ্ধা ছকিনা জানিয়েছে, ভোরে ডিসির মোড়ে ঝাড়– দিতে গিয়ে ম্যুরোলে এলোমেলো অবস্থায় ফুলমালাগুলোতে ওই বাঁশের ফালটিগুলো দেখতে পায়। সেখান থেকে কয়েকটি ফালটি তিনি নিয়ে যান। অন্যদিকে ইঞ্জিনিয়ার পাড়ার বাদশা ফুল বিতান থেকে দুপুরে পুস্পমাল্যে ব্যবহৃত ৮ টি ককশিট উদ্ধার করেছে পুলিশ। ঘটনাস্থলের দুই পাশে দুটি সিসি ক্যামেরা আছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে দুর্বৃত্তদের সনাক্তে জোড়তাল প্রচেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।

এদিকে সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেছেন, ঘটনায় নিন্দা জানানোর ভাষা নেই। জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে তাদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দিতে হবে।

জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রাজু জানান. জড়িতদের গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত রংপুর জেলার প্রতিটি উপজেলায় বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ চলবে। আমরা দ্রুত দায়ীদের গ্রেপ্তার চাই ।