নিউজ ডেস্ক:
র্যাব-১৩ রংপুর এর পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়, গত এক মাসে রংপুর মহানগরসহ আশেপাশের জেলায় বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল চুরির ঘটনা ঘটেছে। মোটরসাইকেল চুরির সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যাওয়ায় চুরির ঘটনা গুলো নিয়ে র্যাবসহ অন্যান্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করে।
এমনি একজন ভুক্তভোগী মোঃ সোহাগ হাসান (৩০) যার কষ্টার্জিত অর্থে কেনা মোটরসাইকেলটি মাত্র তিন মিনিটের ব্যবধানে কয়েকজন অজ্ঞাতনামা যুবক চুরি করে নিয়ে চলে যায়। মোটরসাইকেল স্টার্ট দেওয়ার শব্দ শুনে সে তৎক্ষনিক বের হয়ে আসে কিন্তু ততক্ষনে চোর চক্রটি মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যায়। মোটরসাইকেল চুরির ঘটনায় সে অজ্ঞাতনামা চোরদের বিরুদ্ধে হারাগাছ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন ।
উক্ত ঘটনাটি র্যাব-১৩’র নজরে আসে এবং গোয়েন্দা অনুসন্ধান শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সিপিএসসি, র্যাব-১৩, রংপুর এর একটি আভিযানিক দল গত ১৯/০৯/২০১২ ইং তারিখ রাত ২০.৪৫ ঘটিকায় কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট থানার গোবদা গ্ৰাম হতে আসামী মোঃ ইদুল মিয়া (৩৩), পিতা-মৃত আমজাদ হোসেন, সাং-গোবদা, থানা-রাজারহাট, জেলা-কুড়িগ্রামকে গ্রেফতার করে।
র্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে, মোটরসাইকেল চোর মোঃ ইদুল মিয়া (৩৩) স্বীকার করে যে, সে ও তার অন্য এক সহযোগী মোঃ আলম (৩১), পিতা-মোঃ বাবুল, সাং-গোবদা, থানা-রাজারহাট, জেলা-কুড়িগ্রাম দুজনে মিলে গত ১১/০৯/২০২২ ইং দুপুর আনুমানিক ০২.৪০ ঘটিকায় বাদী মোঃ সোহাগ হাসান (৩০) এর মোটরসাইকেলটি তার বাড়ির সামনে থেকে চুরি করে। এবং তার আরেক সহযোগী রাজু আহম্মেদ (৩৭), পিতা-মোঃ ইসহাক চৌধুরী, সাং খোদ ভূতছড়া, থানা-কাউনিয়া, জেলা-রংপুর এর কাছে।
তার রংপুর মহানগরীর কোতয়ালী থানাধীন কামালকাছনা পূর্ব শালবন এর ভাড়া বাসায় গিয়ে বুঝিয়ে দিয়ে আসে। এছাড়াও সে মোঃ আব্দুল হাকিম মিয়া (৪০), পিতা-মোঃ খবির আলী এর কাছেও বিভিন্ন সময় চোরাই মোটরসাইকেল গুলো বিক্রি করে থাকে। সেই রাজু আহম্মেদ (৩৭), মোঃ ইদুল মিয়া (৩৩) কে মোটরসাইকেল প্রতি ৩০,০০০/- থেকে ৪০,০০০/- হাজার টাকা প্রদান করে। পরবর্তীতে চোরাই মোটরসাইকেল এর ইঞ্জিন নম্বর, চেসিস নম্বর টেম্পারিং এবং ভুয়া কাগজপত্র তৈরী করে মোটরসাইকেলের মালিক সেজে দ্বিতীয় পক্ষের কাছে বিক্রি করে দেয়।
মোটরসাইকেল চোর মোঃ ইদুল মিয়া (৩৩) এর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী অপর আসামী রাজু আহম্মেদ (৩৭), কোতয়ালী থানাধীন পূর্ব শালবন এর ভাড়া বাসার নিচতলা হতে চোরাই মোটরসাইকেলের পর্যাপ্ত সরঞ্জামাদি আলামত, বিআরটিএ এর জাল সীলমোহর, মোটর সাইকেল লক খোলার মাস্টার কী, বিভিন্ন নামের জাতীয় পরিচয় পত্র, বিভিন্ন ব্যক্তির পাসপোর্ট সাইজের ছবি, বেনামী ব্যক্তির একাধিক সীম, এফিডেভিড সীল মোহর সম্বলিত বাইক বিক্রির তৈরীকৃত ভূয়া কাগজপত্র, মোটরসাইকেল এর জাল রেজিস্ট্রেশন কার্ড/স্মার্টকার্ড উদ্ধারসহ চুরি করা মোটরসাইকেল গুলোর মূল কাগজপত্র ও স্মার্টকার্ড উদ্ধার করা হয়েছে।
এ ছাড়াও মোটরসাইকেল চোর মোঃ ইদুল মিয়া (৩৩) এর স্বীকারোক্তিমূলে মোঃ আব্দুল হাকিম মিয়া (৪০), পিতা-মোঃ খবির আলী, সাং-জাকলাটারি, থানা-ফুলবাড়ি, জেলা-কুড়িগ্রাম এর নিজ বাড়িতে অভিযান চালিয়ে সদ্য চোরাইকৃত মোটরসাইকেল এর টুল কীট, রেজিস্ট্রেশন নম্বর প্লেটের ব্যাকপার্ট, ইঞ্জিন নম্বর এবং চেসিস নম্বর টেম্পারিং করার কাজে ব্যবহৃত রেতি, মোটরসাইকেল খোলা জোড়া করার যাবতীয় টুলস্ উদ্ধার করা হয়েছে। এ সময় আব্দুল হাকিম (৪০) পলাতক ছিল।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব আরও বলেন, মোটরসাইকেল চোর আসামী মোঃ ইদুল মিয়া (৩৩) ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানায় একটি ডাকাতি মামলার ০১নং আসামী এবং নীলফামারী, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলার সদর থানায় মোটরসাইকেল চুরির মামলাসহ সর্বমোট ১০ (দশ) টি মামলা রয়েছে।
সম্প্রতি রংপুর মহানগরীতে যে বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল চুরির ঘটনা ঘটেছে তার মূল হোতা মোঃ ইদুল মিয়া (৩৩)। চুরি হওয়ার মোটরসাইকেল গুলোর বেশ কয়েকটি অন্যান্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনী উদ্ধার করেছে কিন্তু মূল হোতা মোঃ ইদুল মিয়া (৩৩) ধরা ছোঁয়ার বাইরে ছিল।
ধৃত আসামী মোঃ ইদুল মিয়া (৩৩) ও মোঃ রাজু আহম্মেদ (৩৭), তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন, সংযুক্ত সীম, চোরাইকৃত একটি এপাচি (১৫০সিসি) নীল সাদা রংয়ের মোটরসাইকেল, মোটরসাইকেল চুরির সরঞ্জামসহ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য হারাগাছ থানায়, হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলমান আছে।
এম২৪নিউজ/আখতার