নিউজ ডেস্ক:
রংপুর সদর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের দৈনিক হাজিরাভিত্তিক কর্মচারী রনি মিয়ার (২৮) নগরীতে পাঁচতলা বাড়ির সন্ধান মিলেছে। নগরীর নীলকণ্ঠ এলাকার চিকলী ওয়াটার পার্কের পেছনে রনির বাড়িটির নির্মাণ কাজ চলছে। এরইমধ্যে তিনতলার কাজ শেষ হয়েছে। এখন পাঁচতলা পর্যন্ত নির্মাণকাজ চলছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৪ কোটি টাকা। জনমনে প্রশ্ন উঠেছে রনি এত টাকা পেলেন কোথায়?
রংপুর সদর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের নথিপত্রে দেখা গেছে, রনি মিয়া নামের কোনো কর্মচারীর নাম নেই। তাকে দৈনিক ৩০০ টাকা হাজিরা হিসেবে অফিসে নিয়োগ দেন সদ্য বদলি হওয়া সাব-রেজিস্ট্রার রামজীবন কুন্ড। এ জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কোনো অনুমতি নেয়া হয়নি বলে জানা গেছে।
রামজীবন কুন্ড জানান, অফিস স্টাফ সংকটের কারণে রনিকে দৈনিক হাজিরা চুক্তির ভিত্তিতে অফিস সহকারী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। এ জন্য অভ্যন্তরীণ ফান্ড থেকে তাকে হাজিরা দেওয়া হতো।
রংপুর সদর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের বেশ কয়েকজন স্টাফ নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, দৈনিক বিভিন্ন দলিল সম্পাদনের জন্য যে অর্থ উত্তোলন করা হয় সেই টাকার একটি অংশ থেকে তাকে হাজিরার টাকা দেওয়া হতো। রনির শুধু পাঁচতলা বাড়ি নয় তার তিনটি মাইক্রোবাস, দুটি কার, কৃষিজামি রয়েছে কয়েক একর। তার কোনো আয়কর টিন নম্বর না থাকায় তার আয়ের কোনো উৎস সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়নি।
গতকাল বুধবার দুপুরে নগরীর পশ্চিম নীলকণ্ঠে রনির নির্মাধীন বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, নির্মাণ শ্রমিকরা বাড়িটির নির্মাণ কাজ করছেন। শ্রমিকরা জানান, শুরু থেকে তারা এখানে কাজ করছেন। পাঁচতলার ভিত্তির এই বাড়ির তৃতীয়তালার কাজ শেষে হয়েছে। এখন চতুর্থতলার নির্মাণ কাজ চলছে।
এলাকার বাসিন্দা মোজাম্মেল হক বলেন, বাড়িটির মালিক রনি। তিনি রংপুর সদর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে দৈনিক হাজিরাভিত্তিতে কাজ করেন। কিভাবে তিনি এই বাড়ি নির্মাণ করছেন তা আমি জানি না। সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে কাজ করে বলে তার পক্ষে সম্ভব হয়েছে।
অপর এলাকাবাসী লিমন মিয়া বলেন, এই এলাকায় এখন পর্যন্ত কেউ এতো সুন্দর বাড়ি করে নাই। অবৈধ আয় করে বলে রনির পক্ষে এই বাড়ি করা সম্ভব হয়েছে।
রনিকে নিয়ে প্রশ্ন করা হলে সদ্য যোগদান করা রংপুর সাব রেজিস্ট্রার রিপন চন্দ্র মন্ডল বলেন, আগে এই অফিসে কোনো নিয়মনীতির বালাই ছিল না। যিনি ছিলেন তিনি তার ইচ্ছে মতো অফিস পরিচালনা করেছেন। আমি যতদিন এখানে থাকবো সরকারের নিয়ম অনুযায়ী অফিস পরিচালনা করবো। আমি থাকা অবস্থায় কাউকে কোনো অনিয়ম করার সুযোগ দেব না। আমি নতুন এসেছি, রনি সম্পর্কে তেমন কিছু জানি না। এ ব্যাপারে জেলা রেজিস্ট্রারের সঙ্গে কথা বলবো বলে জানান তিনি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, রংপুর সদর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে গড়ে প্রতিদিন ১শ’ থেকে দুই শতাধিক দলির রেজিস্ট্রারি হয়ে থাকে। এতে দেখা যায়, প্রতিদিন দলিল সম্পাদন বাবদ প্রায় আড়াই লাখ টাকা থেকে তিন লাখ অর্থ আদায় করে থাকেন সেখানকার কর্মচারীরা। প্রতিদিনের আদায়কৃত অর্থ সেখানকার কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা পেয়ে থাকেন। রনি সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের কর্মচারী না হলেও তার দাপটে অফিসের সবাই তটস্থ থাকেন।
উল্লেখ্য, গত ৮ ডিসেম্বর থেকে রংপুর সদর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে দায়িত্ব পালন করছেন রংপুরের গংগাচড়া উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার রিপন চন্দ্র মন্ডল। গতকাল বুধবার সাব-রেজিস্ট্রারের পাশে কাজ করতে দেখা গেছে রনিকে। সূত্র: ডেইলী বাংলাদেশ
এম২৪নিউজ/আখতার