নিউজ ডেস্ক:
রংপুর সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শিখা রানী রায়ের বিরুদ্ধে এক ব্যক্তির কাছে ঘুষ দাবির অডিও ভাইরাল হয়েছে। এদিকে এই ঘটনায় ওই কর্মকর্তা বাদীর কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন রংপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতের বিশেষ পিপি রফিক হাসনাইন। তিনি বলেন, ‘ওই কর্মকর্তা ঘুষ নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন এবং টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য ভুক্তভোগীর স্বজনদের অফিসে ডেকে পাঠিয়ে নির্যাতন করেছেন।’
ফাঁস হওয়া ৪৪ সেকেন্ডের অডিওতে ভুক্তভোগীর পরিচয় দিয়ে একজন পুরুষ তদন্ত প্রতিবেদন কবে দেবেন, তা জানতে চান। অন্য প্রান্তে নারী কণ্ঠে একজনকে বলতে শোনা যায়, ‘যত তাড়াতাড়ি আমাদের সন্তুষ্ট করতে পারবেন, তত তাড়াতাড়ি রিপোর্ট পাবেন।’ এ সময় পুরুষ কণ্ঠে আরও বলা হয়, ‘যে ১০ হাজার দিয়েছি, তা দিয়েই কাজটা করে দেন।’ তখন নারী কণ্ঠে বলা হয়, ‘দেখি অফিসে গিয়ে আগে কথা বলি…।’
অভিযোগে জানা গেছে, এক গৃহবধূকে যৌতুকের দাবিতে নির্যাতন করে গর্ভের সন্তান নষ্ট করাসহ বিভিন্ন অভিযোগে মামলা তদন্ত করার নামে বাদীর কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠে। বিষয়টি জানাজানি হলে টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলে বাদীর বাবা ও ভাইকে অফিসে ডেকে শারীরিক নির্যাতন করে।
মামলার অভিযোগ ও নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ আফসানা মিমি জানান, ‘তার বাবার নাম আফসার আলী, বাড়ি গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ি উপজেলার জামালপুর গ্রামে। ৫ বছর আগে তার সঙ্গে একই উপজেলার বাঁশকাটা গ্রামের রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশে কর্মরত পুলিশ কনস্টেবল ইসমাইল হোসেনের বিয়ে হয়। বিয়ের সময় সোনার গহনা আসবাবপত্রসহ নগদ অর্থ প্রদান করে তার পরিবার। এরপর তারা রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইনের কাছে বুড়িরহাট রোডে বাসা ভাড়া নিয়ে স্বামীর সঙ্গে বসবাস করে আসছিলেন।
আফসানা মিমি আরও জানান, বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই স্বামী পুলিশ কনস্টেবল ইসমাইল হোসেন তার কাছে জানায়-পুলিশের চাকরি নিতে অনেক টাকা খরচ হয়ে গেছে। বাবা-মাকে বলে ৫ লাখ টাকা নিয়ে আসতে। এ কথা বলে টাকার জন্য তাকে প্রায়ই নির্যাতন করতো। তার বাবা গরিব মানুষ এত টাকা দিতে পারবে না জানালে ২০১৯ সালের ৭ মে আফসানা মিমিকে তার স্বামী মারধর করে গুরুতর আহত করেন। অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে দুইদিন চিকিৎসার পর বাসায় ফিরে আসেন।
এরপর এলাকাবাসী ও স্বজনদের মধ্যস্থতায় জমি বিক্রি করে স্বামী ইসমাইল হোসেনকে ৩ লাখ টাকা প্রদান করেন। এরপর থেকে তারা সুখেই সংসার করে আসছিলেন। এক পর্যায়ে তার স্বামী এক নারী পুলিশ কনস্টেবলের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। বিষয়টি জানাজানি হলে তার স্বামী আবারও মোটরসাইকেল কিনে দেওয়াসহ আরও ৫ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। আবারও টাকার জন্য তার ওপর নির্যাতন শুরু করে। এরপরেও সে সংসার করে আসছিল। এর মধ্যে গৃহবধূ আফসানা মিমি গর্ভবতী হয়ে পড়েন।
৫ মাসের গর্ভবতী হওয়ার পর তার স্বামী আবারও ৫ লাখ টাকা যৌতুকের জন্য চাপ সৃষ্টি করে। টাকা দেওয়ার সক্ষমতা তার পরিবারের নেই জানালে তার স্বামী তার পেটে লাথি মারেন ও মারধর করেন। এতে তার প্রচুর রক্তক্ষরণ শুরু হলে রংপুর নগরীর বুড়িরহাট রোডে বেসরকারি হাসপাতাল রংপুর ক্লিনিকে নিয়ে আসেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার গর্ভপাত হয় এবং গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার স্বামী কোন খোঁজ-খবর না নেওয়ায় সুস্থ হয়ে বাবার বাড়িতে চলে যান।
এ ঘটনায় গত ১৫ ফেব্রুয়ারি তার স্বামীর বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে রংপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন আদালত-১ এ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন আফসানা মিমি। বিচারক আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে ঘটনাটি তদন্ত করার জন্য রংপুর সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শিখা রানীকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করেন।
আফসানা মিমি জানান, সমাজসেবা কর্মকর্তা শিখা রানীর সঙ্গে কয়েকবার যোগাযোগ করলে তিনি মামলার তদন্ত করতে তাকে সন্তুষ্ট করার কথা বলেন। এরপর অনেক কষ্টে ১০ হাজার টাকা জোগাড় করে তার অফিসে গেলে তিনি তার অফিস সহকারী সামিউলের কাছে দিতে বলেন। টাকা দেওয়ার পর তিনি তদন্ত প্রতিবেদন দিতে গড়িমসি শুরু করেন। আদালত ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ উপেক্ষা করেন।
বুধবার (১৩ জুলাই) আদালতে এসে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার বিষয়টি জানতে পারেন আফসানা মিমি। সেখানে তাকে নির্যাতন ও হাসপাতালে ভর্তি থাকা চিকিৎসকের মতামতসহ তার কোন বক্তব্যই গ্রহণ করেননি তদন্তকারী কর্মকর্তা শিখা রানী।
রংপুরের বিশেষ পিপি রফিক হাসনাইনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তিনি আদালতের আদেশ অনুযায়ী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেননি। বাদীর কোন বক্তব্য শোনেননি এবং কাগজপত্র দেখেননি। তদন্ত রিপোর্ট দেওয়ার নামে ১০ হাজার টাকা বাদীর কাছ থেকে নেওয়ার কথা তার কাছেই স্বীকার করে টাকা ফেরত নিতে স্বজনদের অফিসে ডেকেছেন। এরপর টাকা ফেরত না দিয়ে বাদীর বাবা ও ভাইকে মারধর করে আহত করেছেন। বিষয়টি দুঃখজনক, বিষয়টি আদালতকে অবহিত করা হবে।’
এ বিষয়ে জানতে শিখা রানীর মোবাইলে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। সূত্র: ইত্তেফাক অনলাইন
এম২৪নিউজ/আখতার