২০ জুন থেকে বাজারে আসছে সুস্বাদু হাঁড়িভাঙা আম

অনলাইন ডেস্ক:

জিআই পণ্য স্বীকৃত স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয় রংপুরের হাঁড়িভাঙা আম ২০ জুন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাজারে আসছে। তবে টানা খরতাপের কারণে অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর আমের ফলন কম হবে বলে চাষিরা আশঙ্কা করছেন।

কৃষি বিভাগ ও আমচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে পরিপক্ব হাঁড়িভাঙা আম বাজারে মিলবে। এর আগে বাজারে হাঁড়িভাঙা আম পাওয়া গেলেও তা অপরিপক্ব হবে। একটু বেশি দামের আশায় একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা নিয়ম ভঙ্গ করে বাজারে অপরিপক্ব হাঁড়িভাঙা আম বিক্রি করছেন। হাঁড়িভাঙার প্রকৃত স্বাদ পেতে অপেক্ষা করতে হবে জুনের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত। বর্তমানে বাগানগুলোতে আমের শেষ মুহূর্তের পরিচর্যা চলছে। তবে টানা তাপপ্রবাহের কারণে এবার অনেক আমের গুটি ঝরে পড়েছে। এ ছাড়া বৈরী আবহাওয়ায় আমের আকার এ বছর অনেকটা ছোট হয়েছে। এসব কারণে ফলন কম হওয়ার আশঙ্কা চাষিদের। এ নিয়ে চাষিদের দুশ্চিন্তা ভর করলেও দাম ভালো পেলে সেটি পুষিয়ে যাবে বলে আশা তাঁদের।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যমতে, চলতি বছর রংপুর জেলায় ৩ হাজার ৩৩৫ হেক্টর জমিতে আমের চাষাবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে হাঁড়িভাঙা আমের চাষাবাদ হয়েছে ১ হাজার ৯০৫ হেক্টর জমিতে। এ বছর আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৯ হাজার ৭১০ মেট্রিক টন।

হাঁড়িভাঙা আমের বৈশিষ্ট্য হলো এটি আঁশবিহীন, মিষ্টি ও সুস্বাদু। এই আমের আঁটিও খুব ছোট। ছাল পাতলা। প্রতিটি আমের ওজন হয় ২০০ থেকে ৩০০ গ্রাম। চলতি বছর ১২ ফেব্রুয়ারি হাঁড়িভাঙা আম রংপুরের ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে।

মৌসুমের শুরুতে হাঁড়িভাঙার চাহিদা বেশি থাকায় এর দাম কিছুটা বেশি হয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে পাইকারিতে প্রতি কেজি হাঁড়িভাঙা আকারভেদে ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে পারে বলে চাষিরা জানান। খুচরা বাজারে দাম পড়বে আরেকটু বেশি। কৃষি বিভাগ ধারণা করছে, এবার ১৫০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে রংপুরের হাঁড়িভাঙা আমের বেচাকেনা। গত বছর হয়েছিল প্রায় ২০০ কোটি টাকার ওপরে।

মিঠাপুকুর উপজেলায় আমবাগান সরেজমিনে দেখা যায়, সবুজ পাতার ফাঁকে গাছে গাছে ঝুলছে আম। চাষিরা জানান, গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর আমের গুটি কম এসেছে এবং খরায় আমের গোড়া শুকিয়ে ঝরে পড়ার ঘটনাও ঘটেছে।

রংপুরের হাঁড়িভাঙা আমের প্রধান বাজার মিঠাপুকুরের খোড়াগাছ ইউনিয়নের পদাগঞ্জ হাট। এটি পাইকারি বাজার। আমচাষিরা জানান, এ বছর পৌষ-মাঘ মাসে আমের মুকুল আসার সময়ে অসময়ের বৃষ্টি হওয়ায় বাগানের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। তার ওপর এবার এপ্রিল-মে মাসের টানা তাপপ্রবাহে আমগাছে পোকার আক্রমণ হয়েছে। ফলে ঝরে পড়েছে আমের গুটি। পোকা দমনে কীটনাশক ও চাষিদের সাধ্যমতো সেচ দিয়েও খুব একটা কাজ হয়নি। এর ফলে আম উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন রংপুরের আমচাষিরা।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, প্রচণ্ড রোদ ও সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় হাঁড়িভাঙা আমের ফলন কম হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে এর মধ্যেও ভালো দিক রংপুরে ঝোড়ো হাওয়া হয়নি। আমের দাম এবার ভালো। রংপুরের চাষিরাও দাম ভালো পাবেন।

রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান বলেন, কৃষি বিভাগ ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে ২০ জুন থেকে হাঁড়িভাঙা আম পাড়ার সময় নির্ধারণ করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। হাঁড়িভাঙা আমের বাজারজাত করতে যাতে কোনো ধরনের অসুবিধা না হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে নিয়মিত মনিটরিং করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তথ্যসূত্র: প্রথম আলো

এম২৪নিউজ/আখতার

Leave a Reply