রংপুর অফিস:
দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ডের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় পাসের হার গতবারের চেয়ে কমে গেছে। বেড়েছে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা। এবার গড় পাসের হার ৮১ দশমিক ১৬ শতাংশ। গত বছর এই হার ছিল ৯৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। গত বছরের তুলনায় এবার পাসের হার কমেছে ১৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ। পাসের হার কমলেও বেড়েছে জিপিএ-৫ পাওয়া পরীক্ষার্থীর সংখ্যা।
গত বছরের তুলনায় চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে ৮ হাজার ৮ জন। চলতি এসএসসি পরীক্ষায় দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৫ হাজার ৫৮৬ জন শিক্ষার্থী। আগের বছর এই সংখ্যা ছিল ১৭ হাজার ৫৭৮ জন।
সোমবার দুপুরে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন, দিনাজপুর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মোঃ তোফাজ্জুর রহমান।
তিনি জানান, এ বছর দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ডের অধীনে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৮৪৬ জন রেজিস্ট্রেশন করলেও পরীক্ষায় অংশ নেয় ১ লাখ ৭৪ হাজার ৫৭৭ জন। কৃতকার্য হয়েছে ১ লাখ ৪১ হাজার ৬৮২ জন। মোট পরীক্ষার্থী মধ্যে ১৩ হাজার ৩৬৮ জন ছাত্রী এবং ১২ হাজার ২১৮ ছাত্র জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করলেও পরীক্ষায় অংশ নেননি ২ হাজার ২৬৯ জন শিক্ষার্থী। উপস্থিত পরীক্ষাদের মধ্যে ছাত্রদের উপস্থিত ছিল ৮ লাখ ৮ হাজার ২০৫ জন এবং পাসের হার ৮০ দশমিক ৭৭ শতাংশ। এছাড়া ছাত্রীদের উপস্থিতি ছিল ৮ লাখ ৬ হাজার ৭২ জন এবং পাসের হার ৮১ দশমিক ৫৫ শতাংশ। বহিস্কৃত হয়েছেন ৩৬ পরীক্ষার্থী।
পরীক্ষার্থীর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে ৮১ হাজার ১০০ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেন। বিজ্ঞানে পাসের হার ৯৬ দশমিক ০৩ শতাংশ। মানবিক বিভাগে ১০ লাখ ৬ হাজার ৩৪৩ জন পরীক্ষায় অংশ নেয়, পাসের হার ৬৭ হাজার ১১ শতাংশ।ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে ৪ হাজার ৫৩৬ জন পরীক্ষায় অংশ নেয়। এ বিভাগে পাসের হার ৮৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ। শতভাগ পাশকৃত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৮৭টি, শূন্য পাশের হার ৫টি কলেজে।
এছাড়া জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছে দিনাজপুর জেলা। এই জেলায় জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫ হাজার ৮৭২ জন।পরেই রয়েছে রংপুর জেলা জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫ হাজার ৮২৭ জন। গাইবান্ধায় ৪ হাজার ৪৯ জন, নীলফামারীতে ২ হাজার ৭৯৬ জন, কুড়িগ্রামে ২ হাজার ২০৩ জন, লালমনিরহাটে ১ হাজার ৯৯ জন, ঠাকুরগাওয়ে ২ হাজার ৫১৩ জন এবং পঞ্চগড়ে ১ হাজার ২২৭ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে।
রংপুর বিভাগের দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ডর মধ্যে পাসের হারে এগিয়ে রয়েছে দিনাজপুর জেলা। এর পরই রয়েছে ঠাকুরগাঁও জেলা। পাসের হারের রংপুর জেলা রয়েছে পঞ্চম স্থানে। দিনাজপুর জেলার ৩৩ হাজার ৮৩৬ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ২৮ হাজার ২৯৪ জন। পাসের হার ৮৩ দশমিক ৬২ শতাংশ। এ জেলায় জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫ হাজার ৮৭২ জন।
ঠাকুরগাঁও জেলার ১৬ হাজার ৫০০ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১৩ হাজার ৭৮৪ জন পাস করেছেন। সেখানে পাসের হার ৮৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ। জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ২ হাজার ৫১৩ জন। গাইবান্ধা জেলায় ২৫ হাজার ৪৪২ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ২১ হাজার ৯৩ জন। পাসের হার ৮২ দশমিক ৯১ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৪ হাজহার ৪৯ জন পরীক্ষার্থী।
নীলফামারী জেলার ২০ হাজার ৬০৭ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১৬ হাজার ৮৭৮ জন পাস করেছেন। সেখানে পাসের হার ৮১ দশমিক ৯০৪ শতাংশ। জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ২ হাজার ৭৯৬ জন। রংপুর জেলায় ৩৩ হাজার ৬৩০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ২৭ হাজার ৫২৩ জন পাস করেছে।পাসের হার ৮১ দশমিক ৮৪ শতাংশ। এই জেলায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৫ হাজার ৮২৭ জন।
পঞ্চগড় জেলার ১২ হাজার ১১৩ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৯ হাজার ৫৮৫ জন পাস করেছেন। সেখানে পাসের হার ৭৯ দশমিক ১৩ শতাংশ। জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ১ হাজার ২২৭ জন। লালমনিরহাট জেলার ১৩ হাজার ২৪৬ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১০ হাজার ১১৮ জন পাস করেছেন। সেখানে পাসের হার ৭৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ। জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ১ হাজার ৯৯ জন। এছাড়া কুড়িগ্রাম জেলার ১৯ হাজার ২০৩ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১৪ হাজার ৪০৭ জন পাস করেছেন। সেখানে পাসের হার ৭৫ দশমিক ০২ শতাংশ। জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ২ হাজার ২০৩ জন।
রংপুরের শীর্ষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এসএসসি পরীক্ষায় ভাল ফলাফল অর্জন করেছে। সোমবার দুপুরে ফলাফল ঘোষণার পর পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরা উচ্ছসিত হয়ে পড়ে। তবে অনলাইনে রেজাল্ট পাওয়ায় অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষার্থীদের তেমন উপস্থিতি ছিল না।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা যায়, রংপুর ক্যাডেট কলেজে এবার ৪৮ শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে সবাই জিপিএ ৫ পেয়েছে। ক্যান্টপাবলিক স্কুল এন্ড কলেজে ৪৯৯ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে শতভাগ পাস করেছেন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৬০ জন। রংপুর জিলা স্কুলে ২৫৪ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে শত ভাগ পাস করেছে। জিপিএ-৫ পেয়েছে ২০১ জন। রংপুর সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ২৫৮ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ২৫৫ জন পাস করেছে। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৯৩ জন। রংপুর পুলিশ লাইন্স স্কুল এন্ড কলেজের ৩৭৫ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৩৭৪ জন পাস করেছে। জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৬৪ জন।
রংপুর ক্যান্টপাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের উপাধ্যক্ষ ফরহাদুজ্জামান সরকার বলেন, প্রতিষ্ঠানের কর্তব্যরত শিক্ষকদের বাস্তব ধর্মী নিয়মিত শিক্ষাদান, শিক্ষার্থীদের নিয়মিত অনুশীলন, ভালো ফলাফল করার দৃঢ় প্রচেষ্টা, অভিভাবকদের সাহায্য সহযোগিতায় ভাল ফলাফল অর্জনে মূখ্য ভূমিকা রেখেছে। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের দক্ষ ও কার্যকরী সার্বিক দিক নির্দেশনা আমাদের সাফল্যকে ধরে রাখার ব্যাপারে কার্যকরী ভূমিকা রেখেছে।
এম২৪নিউজ/আখতার