স্টাফ রিপোর্টার:
মনিজা বেওয়া (৭২)। স্বামীকে হারিয়েছেন ২০ বছর আগে। ছেলেমেয়ে কেউ বেঁচে নেই। একমাত্র নাতনিকে নিয়ে তাঁর সংসার। নেই থাকার জায়গা, প্রতিবেশি ভাতিজার রান্নাঘরে মাথাগোজার ঠাঁই হয়েছে। দীর্ঘদিন থেকে ভিক্ষাবৃত্তি করে কোনরকমে জীবন চলে তাদের। চরম দুর্দশাগ্রস্ত, খেয়ে না খেয়ে কোনমতে বেঁচে আছেন মনিজা বেওয়া। তিনি উপজেলার রাণীপুকুর ইউনিয়নের দৌলত নূরপুর গ্রামের মৃত. আফছার আলীর স্ত্রী।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, দৌলত নূরপুর গ্রামের কাঁঠমিস্ত্রী মোহাম্মদ মিয়ার বাড়িতে মাত্র দু’টি ঘর। গৃহহীন দরিদ্র বৃদ্ধার সংসারেও অভাবের শেষ নেই। তারপরও মাথাগোজার ঠাঁই করে দিয়েছেন বৃদ্ধা মনিজা বেওয়া ও তার নাতনি আঁখি আক্তারকে। রান্নাঘরে থাকেন তারা। ঘরে থাকার মত পরিবেশ নেই। ভাঙাচুরা টিন দিয়ে তৈরী ঘরটি। নেই দরজা-জানালা। মাঝে মধ্যে গরু রাখা হয় সেই ঘরে। তারপরও সেখানে থাকেন বৃদ্ধা মনিজা বেওয়া ও আঁখি আক্তার। নিদারুন কষ্টে চলছে তাদের জীবন।
দৌলত নূরপুর গ্রামে কাঠমিস্ত্রী মোহাম্মদ মিয়া বলেন, চাচির (মনিরা বেওয়া) কেউ নেই। নেই জমাজমি-বাড়িঘর। একমাত্র বিধবা নাতনিকে নিয়ে তিনি আমার বাড়িতে থাকেন। বাড়ি বাড়ি ভিক্ষা করে জীবনযাপন করেন।
ওই গ্রামের হামিদা বেগম বলেন, সন্তান প্রসবের সময় মারা যায় মনিজা বেওয়ার একমাত্র মেয়ে মাহমুদা বেগম। মাহমুদার একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। তাঁর বিয়ে হয়েছিল। বছর দুয়েক আগে জামাই সড়ক দূর্ঘটনায় মারা গেছে। তারা দু’জনে গ্রামের এক ভাতিজার বাড়িতে রান্নাঘরে থাকেন।
গ্রামবাসীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দৌলত নূরপুর গ্রামের আফছার আলী ছিলেন হতদরিদ্র। অন্যের জমিতে কৃষিকাজ করে চলত তাঁর সংসার। প্রায় ২০ বছর আগে তিনি মারা গেছেন। বেঁচে ছিলো একমাত্র মেয়ে, সেও মারা গেছে বছর দশেক হলো। আঁখি আক্তার নামে একজন নাতনি রয়েছে। তাকে লালন-পালন করে বিয়ে দিয়েছিলেন মনিজা বেওয়া। তার স্বামীও সড়ক দূর্ঘটনায় মারা গেছে। এখন নানী-নাতনি মিলে গ্রামের একজনের রান্না ঘরে বসবাস করেন তারা।
বৃদ্ধা মনিজা বেওয়া বলেন, ‘মুই খুব গরীব, মানুষের বাড়িত থাকো। চায়া মাঙ্গি খাও। মোর আর শরির চলেনা। খুব কষ্টে থাকো বাবা। বিছন্যা নাই, খ্যাতা নাই, খুব কষ্টে থাকো। যেদিন খাবার পাও সেদিন খাও, না পাইলে না খায়া থাকো’। মনিজা বেওয়ার নাতনি আঁখি আক্তার বলেন, ‘নানী আমাকে ছোট হতে মানুষ করেছে।
একজায়গায় বিয়েও দিয়েছিল। সড়ক দূর্ঘটনায় আমার স্বামী মারা গেছে। আমি এখন নানীর সাথে থাকি। মানুষের বাড়িত কাজকাম করে কোনমতে খাই।
রাণীপুকুর ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ফারুক আল মুজাহিদ বলেন, মনিজা বেওয়া হতদরিদ্র মানুষ। তাঁর পাশে দাড়ানোর মত কেউ নেই। তিনি নিদারুন কষ্টে দিনযাপন করছেন। রোগাক্রান্ত অবস্থায় প্রায় খেয়ে না খেয়ে অন্যের রান্নাঘরে থাকেন। আমি সরকারকে তার জন্য কিছু একটা করার অনুরোধ জানাচ্ছি। গ্রামবাসী তবারুকুজ্জামান তুহিন বলেন, খুবই গরীর মানুষ। কোনমতে বেঁচে আছে বলাচলে। মানুষের বাড়িতে থাকে। কখনও খায়, বেশিরভাগ সময় না খেয়ে থাকে।
রাণীপুকুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবু ফরহাদ পুটু বলেন, সরকারীভাবে তিনি বয়স্কভাতা পান। তবে, সেই টাকা দিয়ে চলেন না। শুনেছি খুবই নাজুক অবস্থা, মানুষের বাড়িতে থাকে। ভিক্ষা করে জীবন চলে। তার একটা ব্যবস্থা করা দরকার।
এম২৪নিউজ/আখতার